News Ticker

Menu

হীরের আংটি

হীরের আংটি
নীহাররঞ্জন গুপ্ত

সকালবেলা সবে দ্বিতীয় কাপ চা নিয়ে বিরূপাক্ষ একটি চার্মিনার ধরিয়েছে, সিঁড়িতে হালকা পায়ের জুতোর শব্দ কানে এল।

বিরূপাক্ষ বুঝতে পারে, আগন্তুক আর কেউ নয়, মিতুলবাবু। বিরূপাক্ষ চায়ের কাপে চুমুক দিতে ভুলে যায়, দরজাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক মুহূর্ত পরে মিতুলবাবুকে ঘরে ঢুকতে দেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“কী সংবাদ মিতুলবাবু, আজ তো বুধবার, তোমার স্কুল নেই?”
মিতুল সামনের সোফাটায় বসতে বসতে বললে,“স্কুলে আজ আর যাওয়া হল না, বিরূকাকু।”
“কেন?”
“একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটে গিয়েছে।”
“বিশ্রী ব্যাপার!”
“হঁ্যা, আমার ছোটকাকুর হীরের আংটিটা সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“হীরের আংটি! তা আংটিটা ছিল কোথায়?”
“ছোটকাকুর ডান হাতের আঙুলে। আংটিটা ঢিলে নয় যে আঙুল থেকে পড়ে যাবে কোথাও। বেশ টাইট ছিল আংটিটা।”
“হয়ত মনের ভুলে কোথাও খুলে রেখে  দিয়েছেন।”
“না।”
“তবে তোমার কী মনে হয়?”
“কেউ সরিয়েছে আংটিটা। বাড়িতে একটা নতুন চাকর এসেছে, মনে হচ্ছে এ তারই কাজ। আমি হলফ করে বলতে পারি, এ ঠিক কেষ্টার কাজ।”
“কতদিন আছে চাকরটা তোমাদের বাড়িতে?”
“মাস ছয়েক-”
“এর আগে কখনো কিছু হারিয়েছে ও আসার পর?”
“না। তাছাড়া ও কিছু কুড়িয়ে পেলে তখনই দিয়ে দেয়; একবার একটা একশো টাকার নোট ও ঝাড় দেবার সময় কুড়িয়ে পেয়ে মাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, আর একবার দিদিভাইয়ের কানের সোনার দুল বাথরুমে কুড়িয়ে পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে, তাই বাড়ির সকলের ধারণা, ও আংটিটা চুরি করেনি। কেষ্টাও কাঁদছে, বলছে সে চুরি করেনি–”
“বাড়ি ঘর দোর নিশ্চয়ই সব ভাল করে খোঁজা হয়েছে?”
“অন্তত বার চারেক। ছোটকাকু আমাকে কী বলেছে জানো?”
“কী?”
“আমি যদি আংটিটা খুংজে বের করে দিতে পারি তো সে মেনে নেবে আমি গোয়েন্দাগিরি কিছু-কিছু করতে পারি।”
“তাই তো, তাহলে তো দেখছি আংটির একটা ফায়সলা তোমাকে করতেই হয় মিতুলবাবু, তা তোমার ধারণা এটা ঐ কেষ্টারই কাজ, তাই না?”
“হঁ্যা।”
“কেন বল তো?”
“তুমি শুনলে হাসবে না তো?”
“না,না, বলো কী বলতে চাও?”
“ছোটকাকু ভীষণ ভিতু। ভূতের ভয় তার খুব। তাই সে একা শুতে পারে না তিনতলার ঘরে, মা তাই কেষ্টাকে ছোটকাকুর ঘরে শুতে বলেছিল। কেষ্টা এখানে আসা অবধি তাই শোয়। তাছাড়া ছোটকাকুর সব কাজ ঐ কেষ্টাই করে, কেষ্টা না-হলে তার একদণ্ড চলে না। কেষ্টা ছোটকাকুর কাছে-কাছে থাকে, রাত্রে ঐ ঘরেই শোয়, হয়ত কাল রাত্রে কোন সময় কায়দা করে ছোটকাকুর আঙুল থেকে আংটিটা খুলে নিয়ে সরিয়ে ফেলেছে।”
“কিন্তু আংটিটা তোমার কাকুর আঙুলে বলছ বেশ টাইট হয়ে বসে ছিল–”
“হঁ্যা।”
“তবে, খোলার সময় জানতে পারল না, তবে…”
“কী তবে?”
“তোমার কাকুর বিছানার চাদর আর বালিশের ওয়াড়গুলো ভাল করে দেখো তো কোন-কিছুর দাগ-টাগ আছে কি না।”
“কিসের দাগ?”
“দেখোই না কোন-কিছুর দাগ আছে কিনা। আর একটা কাজ তোমাকে করতে হবে…”
“কেষ্টার বিছানাপত্র আর সুটকেশ তো? তাও দেখা হয়েছে। তাকে সার্চ করাও হয়েছে।”
“ভাল কথা, তোমার কাকুর হাতে কাল রাত্রে আংটিটা ছিল কিনা কেউ দেখেছে?”
“মা দেখেছে, রাত্রে টেবিলে বসে খাবার সময়ও আঙুলে ছিল আংটিটা। দিদিভাইও দেখেছে, ছিল।”
“হঁু। আচ্ছা তোমার কাকুর ঘরে জিনিসপত্র কী আছে?”
“কাকুর পড়ার টেবিল, একটা চেয়ার, বই-খাতাপত্র, আর একটা ছোট আলমারি, জামা-কাপড় রাখবার জন্য।”
“আর-কিছু নেই? কোন মূর্তি, বা ফুলদানি”
“মূর্তি নেই, তবে ফুলদানি আছে। কাকুর খুব ফুলের শখ, রোজ রাত্রে বাজার থেকে টাটকা ফুল নিয়ে আসে, সারারাত্রি আর পরের দিন রাত্রি পর্যন্ত সেই ফুল থাকে। কাকুই ফুলদানির ফুল বদলায়।”
“তাহলে কালকের ফুল আজ এখনো আছে?”
“আছে।”
“একটা কথা জানো? কেষ্ট আজ সকালে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল কি?”
“না। ভোরবেলা উঠে কাকু তার আঙুলে আংটি না দেখে চেঁচামেচি শুরু করে। কেষ্টা তখনও ঐ ঘরে মেঝেতে ঘুমিয়ে, নাক ডাকছিল।”
“তাহলে বাড়ির বাইরে যায়নি?”
“না।”
“শোন মিতুলবাবু, আংটিটা তাহলে এখনও বাড়ির মধ্যেই আছে, কোথাও পাচার হয়নি।”
“কিন্তু–”
“যাও ভাল করে ঐ ঘরেই গিয়ে খঁুজে দ্যাখো। না-পেলে আমাকে জানিও, আর কেষ্টাকে বেরুতে দিও না।”
মিতুলবাবু ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ফিরে এল, মুখে হাসি।
“কী খবর মিতুলবাবু?”, বিরূপাক্ষ শুধায়, “সংবাদ শুভ নিশ্চয়ই?”
“হঁ্যা আংটি পাওয়া গিয়েছে। তবে আমার ধারণাই ঠিক, এ কেষ্টারই কাজ।”
“কেষ্টা স্বীকার করেছে কিছু?”
“না, সে আগের মতই কাঁদছে আর বলছে, সে কিছু জানে না।”
বিরূপাক্ষ মৃদু হেসে বললে,“তা কী করে কোথায় পেলে বলো এবার শুনি।”
“প্রথমেই গিয়ে আমি কাকুর বিছানার চাদর আর বালিশের ওয়াড় পরীক্ষা করি। আগের দিনই চাদরটা মা বদলে দিয়েছিল। চাদরে তেলের দাগ দেখলাম সামান্য-”
“তারপর?”
“গন্ধ শঁুকে দেখলাম কড-লিভার তেলের গন্ধ।”
“কড-লিভার তেল?”
“হঁ্যা, কাকু তো রোজ খায় সকালে উঠে, তার ধারণা ওতে শরীর  সুস্থ থাকে। ছুটে গেলাম কাকুর কাছে, শুধালাম, কাকু আজ কড-লিভার অয়েল খেয়েছ? কাকু তো চটেই লাল। বলে, ইয়ার্কি দিচ্ছ-ইডিয়েট কোথাকার! কিন্তু কাকুর গা থেকে তখনও কড-লিভার অয়েলের গন্ধ বেরুচ্ছে। আমি বুঝলাম কী ঘটেছে।”
“কী ঘটেছে?”
“ঐ কড-লিভার অয়েলই কাকুর আঙুলে লাগিয়ে কুম্ভকর্ণ কাকুর আঙুল থেকে রাত্রে কোন একসময় আংটিটা খুলে নিয়েছে। তাহলে কোথায় রাখল সে আংটিটা? কোথায় রাখতে পারে ভাবতে-ভাবতে চোখ পড়ল ফুলদানিটার দিকে।”
“সাবাস, তারপর?”
“শেষ পর্যন্ত ফুলদানির মধ্যেই আংটিটা পাওয়া গেল। ভাগ্যিস তুমি কাকুর ঘরে জিনিসপত্র কী কী আছে তখন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে। কিন্তু তোমার কাছে আসার আগে কথাগুলো আমার মনে কেন হল না? হওয়া উচিত ছিল, তাই না?”
বিরূপাক্ষ মৃদু হাসছে।
“তুমি হাসছ বিরূকাকু?”
পাশেই শিশির বসে ছিল, সে বললে, “দুঃখ করো না মিতুলবাবু, তুমি এই বয়সেই যা বুদ্ধির পরিচয় দাও, বড় হলে তুমি বিরূপাক্ষ সেনকেও কুপোকাত করবেই-কিরীটী রায় বেঁচে থাকলে তাকেও টপকে যাবে তখন।”
“তা কেষ্টার কী ব্যবস্থা করলে মিতুলবাবু?” বিরূপাক্ষ জিজ্ঞেস করল।
“হাতে-নাতে তো ধরতে পারিনি, শুধু অনুমান-”
“তা ঠিক। তা ছাড়া বেচারা কেষ্টার বয়সই বা কী, চোদ্দ-পনের মাত্র, কিছুটা লোভে পড়েই অপকর্মটা করে ফেলেছিল।”
“মা কিন্তু বলেছে ওকে আর চাকরিতে রাখবে না। জানেন, আমার হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করছিল, একটু আগে।”
“তোমার ছোটকাকু কী বলে?”
“ছোটকাকু বলেছে, ওর নাকি দশ বছর জেল হওয়া উচিত।”
সবাই হাসে।

Share This:

Post Tags:

Jyoti Sing

I'm Jyoti Sing. A full time web designer. I enjoy to make modern template. I love create blogger template and write about web design, blogger. Now I'm working with Themeforest. You can buy our templates from Themeforest.

  • To add an Emoticons Show Icons
  • To add code Use [pre]code here[/pre]
  • To add an Image Use [img]IMAGE-URL-HERE[/img]
  • To add Youtube video just paste a video link like http://www.youtube.com/watch?v=0x_gnfpL3RM