News Ticker

Menu

চিৎকার জুড়ে চোর ধরাল ছাগল

আদ্রা: পদ্ধতিটা নতুন নয়। গাড়ি থামিয়ে চারপাশ দেখে সাঁ করে ছাগল পাকড়ে গাড়িতে ভরে নাও। নির্বিবাদে একটা, দু’টোও তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেরো যে তিন নম্বরে, তা কে জানত! তারস্বরে ব্যা ব্যা চিৎকার জুড়ে সেই তিন নম্বরি ছাগলই লোক জড়ো করে এক ছাগল-চোরকে ধরিয়ে দিল। দলের বাকি দু’জন কোনও রকমে পরিত্রাহি দৌড় দিয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে গেল।
গাড়ি ভাড়া করে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে ধানবাদের ঝরিয়া থানার ওয়াশিপুর গ্রাম থেকে বুধবার আদ্রায় ছাগল চুরি করতে এসেছিল তিন যুবক। ফাঁকা মাঠে চরে বেড়ানো ছাগল তুলে সটান গাড়িতে চালান করে বাড়ি ফিরে বিক্রি করাই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। নীল রঙের ছোট গাড়িতে চড়ে আদ্রার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল ওই তিনজনে। লোকচক্ষুর আড়ালে দু’টো ছাগল তারা এক ফাঁকে তুলে নিয়ে গাড়িতে ভরেও দেয়। খানিক এ দিক ও দিক করার পরে তাদের নজরে পড়ে আদ্রার বন্ধ হয়ে যাওয়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনের মাঠে একটি ছাগল একমনে ঘাস চিবোচ্ছে। চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখে, জনমনিষ্যি নেই। তিনজনে গাড়ি থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়। একজন খপাৎ করে ছাগলটাকে পাকড়াতেই গলা ছেড়ে হাঁকডাক জুড়ে দেয় সেই ছাগল— ব্যা ব্যা ব্যা...। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে খানকয়েক লোক জু়টে যায়। অচেনা একজনকে একটা ছাগল বুকে জাপটে ধরে থাকতে দেখে এবং তাঁর পাশে আরও দু’জনের ভ্যাবাচাকা খাওয়া মুখ দেখে বাসিন্দাদের সন্দেহ হয় তারা ছাগল চোর। বাসিন্দারা তেড়ে এলে দু’জন পালিয়ে যায়। কিন্তু ওয়াশিপুর গ্রামের বছর বাইশের এহেসান খানের চেহারা রোগাপাতলা হলেও পালাতে পারেনি। তাকে চেপে ধরেন বাসিন্দারা। ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে এসে ওরা ছাগল তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ছাগলটা পরিত্রাহি চিৎকার জুড়ে দেয়। সেই চিৎকারে লোকজন এসে একজনকে ধরে ফেলেন।’’
সেই সময়েই ওই এলাকায় মোটরবাইকে টহল দিতে বেড়িয়েছিলেন আদ্রা থানার দুই কনস্টেবল। তাঁরাই ধৃত এহেসানকে ধরে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে গাড়িতে থাকা তিনটি ছাগলও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ছাগলগুলিকে নিয়ে পুলিশের হ্যাপা কম নয়। নিয়ম অনুযায়ী, চোরাই মাল উদ্ধার হলে পাঠাতে হয় আদালতে। কিন্তু ছাগলকে আদালতে পাঠানোর বহু ঝামেলা। ছাগল চোর ধরা পড়ার খবর শুনেই ছাগল ফেরত নিতে থানায় আসতে শুরু করেছে লোকজন। স্ত্রী কাজল বাউরিকে নিয়ে থানায় এসেছিলেন ওই মাঠের পাশের বস্তিতে থাকা রিকশা চালক সনাতন বাউরি। দড়িতে বাঁধা কালো একটি ছাগলকে দেখে কাজল বলে ওঠেন, ‘‘ওই তো আমার কালী। বাচ্চাটা মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য কাঁদছে। কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আহা রে বাচ্চাটা ওর খিদেয় কাঁদছে!’’ কিন্তু নাচার পুলিশ। এক পুলিশ কর্মী এসে বলেন, ‘‘হুটহাট করে আটক ছাগল ছাড়া যাবে না। পশু খামারে ওদের পাঠানো হবে।’’
ও দিকে, ততক্ষণে এহসানকে একপ্রস্ত জেরা করে গিয়েছেন থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ। লকআপে মুখ শুখিয়ে বসে রয়েছে এহসান। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ওর মন খারাপ তো হবেই। আপাতদৃষ্টিতে ছাগল চুরি পেটি কেস (মামুলি অপরাধ) মনে হলেও ব্যবসাটা কিন্তু লাভজনক। মাসে গোটাকুড়ি ছাগল ধরে বিক্রি করতে পারলেই নিট লাভ অন্তত ৫০-৬০ হাজার টাকা!” থানার সামনে খুঁটিতে বাধা ছাগল তিনটে তখন মনের সুখে পুলিশ কর্মীদের এনে দেওয়া বটপাতা, ঘাস চিবোচ্ছিল। হঠাৎই একটা ছাগল ডেকে উঠল— ব্যা ব্যা ব্যা। লকআপে বসেই দাঁত খিঁচিয়ে উঠল এহসান।


Share This:

Post Tags:

Jyoti Sing

I'm Jyoti Sing. A full time web designer. I enjoy to make modern template. I love create blogger template and write about web design, blogger. Now I'm working with Themeforest. You can buy our templates from Themeforest.

  • To add an Emoticons Show Icons
  • To add code Use [pre]code here[/pre]
  • To add an Image Use [img]IMAGE-URL-HERE[/img]
  • To add Youtube video just paste a video link like http://www.youtube.com/watch?v=0x_gnfpL3RM