রাস্তা থেকে খুদেকে শুঁড়ে তুলে হাঁটা দিল দাঁতাল
কাটোয়া: ন’বছরের ছেলেটি কখনও সার্কাস দেখেনি। দেখা হয়নি চিড়িয়াখানাও। তাই গ্রামে হাতি ঢুকেছে খবর পেয়ে সকলের সঙ্গে ছুটেছিল সে। কিন্তু হাতি ঘুরে দাঁড়ালে বাকিরা যে দিকে খুশি দৌড়লেও সে পালাতে পারেনি। পড়ে যায় একেবারে হাতির সামনে।
রবিবার সকালে মঙ্গলকোটে দলছুট দাঁতালটি কয়েক পা এগিয়ে এসে শুঁড়ে তুলে নেয় স্নেহাশিস প্রামাণিক নামে ওই বালককে। দূর থেকে তা দেখে গ্রামবাসীদের তখন মুর্ছা যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু তাদের সবাইকে অবাক করে ছেলেটিকে রাস্তার পাশের খেতে নামিয়ে দিয়ে আবার দুলকি চালে হাঁটা দেয় হাতিটি।
বর্ধমানের কাঁকসা, বুদবুদ বা গলসি এলাকায় বুনো হাতি ঢোকে মাঝে-মধ্যেই। মঙ্গলকোটের কুনুর বা অজয়ের আশপাশের এলাকাতেও দু’এক বার তাদের দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ দিন সকালে একেবারে কাটোয়ায় পৌঁছে যায় একটি দাঁতাল। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বাঁকুড়া থেকে আউশগ্রাম, ভাতারের ওরগ্রাম হয়ে মঙ্গলকোটে পৌঁছয় চারটি হাতি। তার পরেই তাদের মধ্যে একটি দলছুট হয়ে যায়। কাটোয়া-মালডাঙা রাস্তা ধরে সে পৌঁছয় কাটোয়ার দোনা ও শিলে গ্রামে। সেখানে নানা বাড়ি থেকে এটা-ওটা টানাটানি করে, ধানের গোলা ভাঙার চেষ্টা করে। টিন, ক্যানেস্তারা পিটিয়ে তাকে ধাওয়া করেন বাসিন্দারা। তাড়া খেয়ে পূর্বস্থলী হয়ে দাঁতালটি ভাগীরথী পেরিয়ে রাতে নদিয়ার দিকে গিয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা যায়।
এরই মধ্যে দোনা গ্রামে হাতিটির সামনে পড়ে যায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র স্নেহাশিস। স্থানীয় বাসিন্দা তথা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাগর ঘোষের কথায়, ‘‘খেতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি, ছেলেটিকে হাতি শুঁড়ে তুলেছে। সবাই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করি। কিন্তু তার আগেই দেখি, যত্ন করে তাকে নামিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করেছে হাতিটি।’’ সেই দৃশ্য দেখে সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার অবস্থা হলেও স্নেহাশিস বেশ মজা পেয়েছে। তার কথায়, ‘‘প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আছাড় মারবে। কিন্তু, কিছুই না করে জমিতে নামিয়ে দিল।’’ আনন্দে ও উত্তেজনায় সে তার পরে হাতির পিছনে আরও কিলোমিটার খানেক দৌড়েছে।
Social Links: